সমযোজী বন্ধন (Covalent bond)

সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) : রাসায়নিক বন্ধন গুলোর মধ্যে সমযোজী বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা প্রায় সকল জৈব যোগ বা Organic Compound সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) দ্বারা গঠিত। আমাদের জীবনধারণের অন্যতম প্রধান উপাদান পানি একটি সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত যৌগ। সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত যৌগসমূহকে সমযোজী যৌগ বলে। একারণে, পানি একটি সমযোজী যৌগ।

আগের আর্টিকেলে আমরা আয়নিক বন্ধন নিয়ে আলোচনা করেছি। রাসায়নিক বন্ধনের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী? আয়নিক বন্ধন নাকি সমযোজী বন্ধন? অবশ্যই আয়নিক বন্ধন বেশি শক্তিশালী। দুইটি ভিন্নধর্মী চার্জযুক্ত আয়ন পরস্পর আকর্ষণ করে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে বলে এরা অধিক শক্তিশালী হয়। তাহলে সমযোজী বন্ধনে কী ঘটে?

[ সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) । রসায়ন গুরুকুল ]

সমযোজী বন্ধনে মৌলগুলো ইলেকট্রন শেয়ার করে, কিন্তু সমযোজী বন্ধনে কীভাবে ইলেকট্রন শেয়ার হয়? একটি মৌল তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি অযুগ্ম ইলেকট্রনকে (bond electron) অপর মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরের অযুগ্ম ইলেকট্রন বা বন্ড ইলেকট্রনের সাথে শেয়ার করে এক জোড়া শেয়ার ইলেকট্রন (Bond pair electron) তৈরি করে। এবং এই শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়াকেই বন্ড পেয়ার ইলেকট্রন বলে। একটি বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনে দুইটি ইলেকট্রন থাকে। মজার ব্যাপার হলো, দুইটি ইলেকট্রন দুইটি ভিন্ন মৌল থেকে আসে।

আয়নিক বন্ধন এর আর্টিকেলে অষ্টক এর নিয়ম (Rule of Octate) এবং মৌলগুলোর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্থিতিশীলতার ব্যাপারটি এখানেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। সর্বশেষ শক্তিস্তরের যে সকল ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, কিন্তু বন্ধন গঠনে অংশ নেয় না, তাদের লোন পেয়ার ইলেকট্রন (loan pair electron) বলে। এই লোন পেয়ার ইলেকট্রন এবং বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনের যোগফল আট হয় এবং এভাবে তারা s2p6 বা কাছাকাছি নিষ্ক্রিয় মৌলের (Noble gas) সর্বশেষ শক্তিস্তরের রূপ ধারণ করতে পারে।

উপরের চিত্রটিতে কার্বন (C) ও অক্সিজেন (O) এর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে দেখানো হয়েছে। C এর ইলেকট্রনকে সবুজ ও O এর ইলেকট্রনগুলোকে লাল দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কার্বনের শেষ শক্তিস্তরে দুইজোড়া করে বন্ড ইলেকট্রন দুইপাশে দেখা যাচ্ছে।

CO2 একটি সমযোজী যৌগ। ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে কার্বন ও অক্সিজেন মিলিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গঠন করে এবং অভ্যন্তরীণ মৌলগুলো স্থিতিশীল হয়।

লোন পেয়ার ইলেকট্রনের রিপালশন বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি হয়। মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস ChemistryGOLN.com এর “ইলেকট্রন বিন্যাস” আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত লিখা হয়েছে। আর রাসায়নিক বন্ধন আর্টিকেলে VSEPR থিওরির কথা কেবল বলা হয়েছিল। পরের আর্টিকেলে বন্ধন কোণ ও সমযোজী যৌগের জ্যামিতিক আকৃতি নিয়ে বিস্তারিত লিখা হবে।

এখন, সমযোজী বন্ধনে ইলেকট্রন শেয়ার নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, প্রতিটি মৌল আসলে নিজের ইলেকট্রন বিন্যাস নিয়ে অস্থিতিশীল এবং তারা স্থিতিশীল হতে চায়। তাদের স্থিতিশীল হওয়ার জন্য মডেল মৌল হলো পর্যায় সারণির গ্রুপ 18 এ অবস্থিত নিষ্ক্রিয় মৌলগুলো (Inert Gases)।

সমযোজী যৌগের অনেক ধরণের বন্ধন হয়ে থাকে। যেমন, H-Cl একটি বন্ধন, আবার H-H একটি বন্ধন। প্রতিটি বন্ধনের জন্য বন্ধন শক্তি (Bond Energy) আলাদা হবে।
আবার, সিগমা বন্ধন এবং “পাই” বন্ধন জৈব যৌগের সমযোজী বন্ধনে একটি অতি পরিচিত নাম।

উপরে পাশাপাশি তিনটি ছবিতে সিগমা এবং পাই বন্ধন দেখানো হয়েছে। প্রথম ছবিতে শক্তিস্তরের সংকরায়ন (Hybridization), পরের ছবিতে C-C সিগমা বন্ধন এবং তার পরের ছবিতে C=C ডাবল বন্ডের একটি সিগমা ও একটি “পাই” বন্ধন দেখানো হয়েছে।

জৈব যৌগে একক বন্ধনগুলো সিগমা বন্ধন এবং দ্বি বন্ধন (Double bond) অথবা ত্রি বন্ধনের (Triple bond) ক্ষেত্রে প্রথম বন্ধনটি সিগমা বন্ধন এবং পরের বন্ধনগুলো “পাই” বন্ধন হবে।

 

উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে একক বন্ধনগুলো সিগমা বন্ধন এবং Propene এর একটি দ্বি বন্ধন (Double bond) রয়েছে, যেখানে একটি সিগমা বন্ধন ও অপরটি “পাই” বন্ধন।

 

সিগমা বন্ধনগুলো পাই বন্ধনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয় এবং সিগমা বন্ধনকে সহজে ভেঙ্গে আলাদা করা সম্ভব নয়। এবিষয়ে ChemistryGOLN.com এর “জৈব যৌগ” আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

অজৈব সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে loan pair এবং bond pair ইলেকট্রন সনাক্ত করা খুব বেশি জরুরী। আমরা একটি চিত্র ও টেবিলের মাধ্যমে এখন সেটি দেখব।

 

 

Ne একটি নিষ্ক্রিয় মৌল, দেখা যাচ্ছে তার কোন বন্ড ইলেকট্রন নাই। তবে মিথেন (CH4 ) গঠনের সময় শেষ শক্তিস্তরের সকল ইলেকট্রন শেয়ারে অংশ নেয় এবং কোন লোন পেয়ার ইলেকট্রন থাকে না। সব ইলেকট্রন এখানে বন্ড পেয়ারে পরিনত হয়েছে। মাঝের চিত্রে দুইটি ফ্লোরিন মিলে F-F বা F2 সমযোজী যৌগ গঠন করেছে।
এখন আমরা পানি (H2O) কীভাবে সমযোজী যৌগ তা ব্যাখ্যা করব।

হাইড্রোজেনের ইলেক্ট্রন বিন্যাসঃ 1H => 1s1

অক্সিজেনের ইলেকট্রন বিন্যাসঃ 😯 => 1s2 2s2 2px2 2py1 2pz1

দেখা যাচ্ছে, H এর একটি মাত্র শক্তিস্তর, যেখানে একটি ইলেকট্রন আছে। এটি Duet Rule মেনে হিলিয়ামের মত হতে চায়। তাই সে তার 1s এ আরো একটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন অনুভব করে। অক্সিজেনের 2py ও 2pz এ একটি করে ইলেকট্রন আছে, তাদের Ne এর মত হতে এগুলোতে আরো একটি করে মোট দুইটি ইলেকট্রন লাগবে। তখন দুইটি হাইড্রোজেন একটি অক্সিজেনের সাথে একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে একটি H2O সমযোজী যৌগ গঠন করে।

চিত্রে একটি পানির অনুর সমযোজী গঠন দেখানো হয়েছে।
একইভাবে CCl4 এর গঠন দেখানো হলো।

 

পৃথিবীতে সমযোজী যৌগের সংখ্যা তুলনামূলভাবে আয়নিক যৌগের থেকে অনেক বেশি।

 

আরও দেখুন:

বি সি আই সি বা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন

কেমিক্যাল গুরুকুলে আজকে আমরা বি সি আই সি বা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব। বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন, সংক্ষেপে বিসিআইসি যা বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ব কেমিক্যাল নিয়ে বিশদ গবেষণা ও কাজ করা কর্পোরেশন, বাংলাদেশের রাসায়নিক শিল্পে এই প্রতিষ্ঠানের মুখ্য ভূমিকা অনস্বীকার্য।

বি সি আই সি বা বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পোরেশন এর অধীনস্থ প্রতিষ্ঠানসমূহ হচ্ছে:

  • শাহজালাল ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড
  • চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরি লিমিটেড
  • যমুনা ফার্টিলাইজার কোম্পানি লিমিটেড
  • আশুগঞ্জ ফার্টিলাইজার অ্যান্ড কেমিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড
  • ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেড
  • পলাশ ইউরিয়া ফার্টিলাইজার ফ্যাক্টরী লিমিটেড
  • টিএসপি কমপ্লেক্স লিমিটেড
  • ডিএপি ফার্টিলাইজার কোম্পানী লিমিটেড।

এসবই এই প্রতিষ্ঠানের অধীনস্থ সার কারখানা।

এছাড়াও এই প্রতিষ্ঠান আরো বিভিন্ন ধরনের কারখানা আছে, যে সকল কারখানায় প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন রাসায়নিক ব্যবহার করে ভিন্ন ভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য প্রস্তুত করে। এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো হলো

ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড, উসমানিয়া গ্লাস শিট ফ্যাক্টরি লিমিটেড, বাংলাদেশ ইনসুলেটর এন্ড স্যানিটারি ওয়্যার ফ্যাক্টরি লিমিটেড, খুলনা হার্ডবোর্ড মিলস লিমিটেড, কর্ণফুলী পেপার মিলস লিমিটেড।

 

 

ছবিতে আকাশ থেকে তোলা কর্ণফুলী কাগজ কল দেখা যাচ্ছে, যা দেশের সবচেয়ে বড় কাগজ কল।

বাংলাদেশের একমাত্র রাষ্ট্রায়ত্ত সিমেন্ট ফ্যাক্টরি হচ্ছে ছাতক সিমেন্ট কোম্পানি লিমিটেড যা বিসিআইসি এর অধীনস্থ একটি প্রতিষ্ঠান। কর্ণফুলী পেপার মিল লিমিটেড বাংলাদেশের কাগজ অঙ্গনে চির পরিচিত একটি নাম।

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশন একটি প্রশিক্ষণ ইন্ডাস্ট্রিও পরিচালনা করে, যার নাম ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস। এছাড়াও এ প্রতিষ্ঠানটির একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সেকশন রয়েছে।

 

 

বিসিআইসি স্কুল এন্ড কলেজ নামে দেশের বিভিন্ন স্থানে, যেখানে বিসিআইসি এর কোন কারখানা বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে, সেখানে এই স্কুল এন্ড কলেজটি শাখা প্রতিষ্ঠা করেছে এবং প্রাথমিক, মাধ্যমিক, উচ্চমাধ্যমিক স্তরে ন্যাশনাল কারিকুলামে পাঠদান করে যাচ্ছে। মূলত বিসিআইসি এর স্টাফগণের সন্তান অথবা পোষ্যগনের জন্য এই স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করা হয়েছিল। তবে এই প্রতিষ্ঠানটি বর্তমানে সকলের জন্যই উন্মুক্ত।

বাংলাদেশে কেমিক্যাল নিয়ে কাজ এবং গবেষণা করার অন্যতম প্রধান রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশন। বিসিআইসি এর প্রধান কার্যালয় রাজধানী ঢাকার মতিঝিলের দিলখুশা বাণিজ্যিক এলাকার ৩০-৩১ বিসিআইসি ভবন, ঢাকা ১০০০.

বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশন শিল্প মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান একজন চেয়ারম্যান যিনি সরকারের গ্রেড ১ পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা। পরিচালনা পর্ষদে চেয়ারম্যান ছাড়াও বেশ কয়েকজন পরিচালক থাকেন যারা সরকারের যুগ্ম সচিব সমপর্যায়ের কর্মকর্তা। পরিচালক গণের মধ্যে কারিগরি ও প্রকৌশল, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, উৎপাদন ও গবেষণ, পরিচালক (বাণিজ্যিক) ও পরিচালক (অর্থ) – মোট পাঁচ জন। চেয়ারম্যান এবং এই 5 জন পরিচালক সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হন।

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পরে ১৯৭২ সালের রাষ্ট্রপতির ২৭ নম্বর অধ্যাদেশের ১৯৭৬ সালের ২৫ নম্বর সংশোধনী বলে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিস কর্পোরেশন প্রতিষ্ঠিত হয়। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের তিনটি কর্পোরেশন যা পরবর্তীতে বাংলাদেশের তিনটি কর্পোরেশন হিসেবে কাজ করে আসছিল, তাদের সমন্বিত প্রতিষ্ঠান বি সি আই সি। আজকের বিসিআইসি প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ সার রসায়ন ও ভেষজ শিল্প করপোরেশন, বাংলাদেশ কাগজ ও বোর্ড কর্পোরেশন, বাংলাদেশ ট্যানারিজ কর্পোরেশন, এই তিন কর্পোরেশনের একিভূতকরণের ফল হিসেবে ০১ জুলাই ১৯৭৬ সন হতে কার্যক্রম শুরু করে।

বিসিআইসি এর প্রতিটি কারখানার জন্য আলাদা এন্টারপ্রাইজ বোর্ড অথবা কোম্পানি বোর্ড রয়েছে। প্রতিটি এন্টারপ্রাইজ বোর্ড এ শিল্প মন্ত্রণালয়ের একজন প্রতিনিধি বোর্ডের পরিচালক হিসেবে নিয়োজিত আছেন।

উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত 88 টি প্রতিষ্ঠান নিয়ে বিসিআইসি যাত্রা শুরু করেছিল। পরবর্তীতে অন্য সংস্থা হতে তিনটি কারখানা এবং বিসিএসির নতুন ছয়টি কারখানা এই বহরে যুক্ত হয়। সরকার বিরাষ্ট্রীয়করণ নীতিমালা বাস্তবায়নের ফলে 97 টি প্রতিষ্ঠান মধ্যে 65 টি প্রতিষ্ঠান হতে পুঁজি প্রত্যাহার করা হয়। সাতটি কারখানা প্রাক্তন মালিকের নিকট এবং সাতটি কারখানা মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের নিকট স্থানান্তর করা হয়। পাঁচটি প্রতিষ্ঠান সরকারি সিদ্ধান্তে বন্ধ হয়ে যায়। সর্বশেষ 13 টি শিল্প প্রতিষ্ঠান বিসিআইসির নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত হচ্ছে এবং শেয়ারের ভিত্তিতে আরো নয়টি শিল্প প্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে।

বিসিআইসি এর উৎপাদিতপূর্ণ সামগ্রীর মধ্যে ৮০% রাসায়নিক সার। এর মধ্যে 70 পার্সেন্ট ইউরিয়া এবং 10 শতাংশ অন্যান্য সার। এছাড়াও বিসিআইসি সিমেন্ট, কাগজ, গ্লাস সিট, বোর্ড, স্যানিটারি ওয়্যার ও ইনসুলেটর প্রভৃতি পণ্য সামগ্রী উৎপাদন করে।

বিসিআইসি দেশে মোট ইউরিয়া সারের চাহিদার যে অংশটুকু সংস্থাধীন কারখানা সমূহ উৎপাদন সম্ভব নয় তা বিদেশ থেকে আমদানি করে। তবে তাদের প্রধান লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে জাতীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের অন্যতম কৃষিখাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে দেশের আপামর কৃষকদের চাহিদা মোতাবেক ন্যাযামূল্যে ইউরিয়া সার সরবরাহ ও বিতরণের মাধ্যমে দেশের চাহিদা মেটানো।

বিসিআইসি তাদের সার এবং অন্যান্য সামগ্রিক উৎপাদনের মাধ্যমে এবং বাজারজাতকরণের মাধ্যমে বাজার মূল্য স্থিতিশীল রাখতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখে। যে সকল পণ্য বিসিআইসি কম পরিমাণ উৎপাদন করে সে সকল পণ্য উৎপাদন করার মূল লক্ষ্যই হচ্ছে বাজার মূল্য নিয়ন্ত্রণ করা। কেননা এসেছে সরকার বুঝতে পারে একটি পণ্য উৎপাদন পরিবহন কিংবা বিপণনের ক্ষেত্রে প্রকৃত মূল্য কি হওয়া উচিত।

দেশে কেমিক্যাল খাতে দক্ষ জনবল গড়ে তোলা এবং বাংলাদেশের শিল্পায়নে যথাযথ ভূমিকা ও অবদান রাখা বিসিআইসির অন্যতম লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য। দেশের অনেক বেসরকারি কোম্পানি রাসায়নিক দ্রব্য নিয়ে কাজ করে কিংবা সার উৎপাদন করে তাদের সাথে বিসিআইসি বেশ কিছু যৌথ প্রকল্প রয়েছে। উল্লেখযোগ্য হচ্ছে সানোফি বাংলাদেশ লিমিটেড, নোভারটিস বাংলাদেশ লিমিটেড, সিনজেনটা বাংলাদেশ লিমিটেড, ঢাকা ম্যাচ ইন্ডাস্ট্রিজ কোম্পানি লিমিটেড, বায়ার ক্রপ সাইন্স লিমিটেড, বাল্ক ম্যানেজমেন্ট বিডি লি. এবং মিরাকল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড।

বাংলাদেশে রাসায়নিক সম্পর্কিত শিল্পে অবদান রাখা, নিয়ন্ত্রণ করা ও উন্নয়নের ক্ষেত্রে বিসিআইসি এর গুরুত্ব অপরিসীম।
রাষ্ট্রীয় এই কর্পোরেশনটির অফিসিয়াল ওয়েবসাইট www.bcic.gov.bd

আরও দেখুন:

রাসায়নিক বন্ধন : আয়নিক বন্ধন

রাসায়নিক বন্ধনঃ আয়নিক বন্ধন: রাসায়নিক সম্পর্কে ভাল ধারণা পেতে রাসায়নিক বন্ধন নিয়ে বিস্তারিত জানা আবশ্যক। রাসায়নিক বন্ধন হচ্ছে একাধিক মৌল বা যৌগ কীভাবে পরস্পর যুক্ত হয়ে নতুন যৌগ গঠন করে সে সম্পর্কিত আলোচনা। রাসায়নিক বন্ধন কেবল মৌল বা যৌগগুলোর মধ্যে নয়, আয়নসমূহের মাঝেও রাসায়নিক বন্ধন থাকতে পারে। রাসায়নিক বন্ধন ছাড়া কোন রাসায়নিক পদার্থ গঠন হওয়া সম্ভব নয়।

রাসায়নিক বন্ধন কতটা শক্তিশালী বা স্থায়ী, তাঁর উপর ভিত্তি করে একে দুইটি ভাগে ভাগ করা হয়। একটি হলো প্রাইমারি বন্ড এবং অপরটি সেকেন্ডারি বন্ড। প্রাইমারি বন্ড হচ্ছে শক্তিশালী বন্ধন আর সেকেন্ডারি বন্ড হচ্ছে অপেক্ষাকৃত দুর্বল বন্ধন। প্রাইমারি বন্ধনের মাঝে আমরা প্রধান ও পরিচিত তিনটি রাসায়নিক বন্ধন আয়নিক বন্ধন (Ionic Bond), সমযোজী বন্ধন (Covalent Bond) এবং ধাতব বন্ধন (Metallic Bond) কে দেখতে পাব ; আর সেকেন্ডারি বন্ধনের উদাহরণ হিসেবে ডাইপোল-ডাইপোল আকর্ষণ কিংবা হাইড্রোজেন বন্ধন এর কথা বলা যেতে পারে।

[ রাসায়নিক বন্ধন : আয়নিক বন্ধন ]

যদিও সকল রাসায়নিক বন্ধনকে কোয়ান্টাম থিওরি দিয়ে বর্ণনা করা যায়, তবুও মৌলসমূহের অরবিট এর স্থিতিশীলতার নীতি এবং VSEPR থিওরি (Valence shell electron pair repulsion) দিয়ে বন্ধনসমূহকে বর্ণনা করা হয়ে থাকে এবং এটিই বহুল প্রচলিত ও পরিচিত।

VSEPR থিওরি হলো মৌলগুলোর সর্বশেষ শক্তিস্তর বা যোজনী স্তরের ইলেক্ট্রন যুগল এর রিপালশন থিওরি। এটিকে ব্যাখ্যা করতে গেলে আমাদের অরবিট এবং অরবিটাল নিয়ে কিছু কথা বলতে হবে।

পর্যায় সারণির কোন একটি মৌল, ধরা যাক সোডিয়াম (Na) । সোডিয়ামের ইলেক্ট্রন সংখ্যা ১১, এবং এর পারমানবিক সংখ্যাও ১১ । কোন মৌলের নিউক্লিয়াসে অবস্থিত এর মোট প্রোটন সংখ্যাকে ঐ মৌলের পারমানবিক সংখ্যা বলে। প্রোটন পজিটিভ (+) চার্জযুক্ত হয় আর ইলেকট্রন নিগেটিভ (-) চার্জযুক্ত হয়। পরমানুর কেন্দ্রে নিউক্লিয়াসে যদিও নিউট্রন নামক কণিকা থাকে, কিন্তু নিউট্রনের কোন চার্জ থাকে না। একটি পরমানু যেন চার্জ প্রদর্শন করতে না পারে এবং নিউট্রাল চার্জ প্রদর্শন করে, সেজন্য এর ভেতরের ইলেকট্রন এবং প্রোটন সংখ্যা সবসময় সমান থাকে। যদি একই মৌলের একাধিক নিউট্রন সংখ্যাযুক্ত পরমাণু দেখতে পাওয়া যায়, তখন তাদেরকে ঐ মৌলের আইসোটোপ (Isotope) বলা হয়। এই অসম নিউট্রনযুক্ত নিউক্লিয়াস পরমাণুর চার্জের বা বন্ধন বিষয়ক কোন ধর্মের পরিবর্তন করে না।

যাই হোক, সোডিয়ামের সাথে আরেকটি মৌল নিয়ে এদের যৌগ গঠন ব্যাখ্যা করে আমরা রাসায়নিক বন্ধন বোঝার চেষ্টা করব। সোডিয়াম (Na-11) এবং আরেকটি মৌল ক্লোরিন (Cl-17) এর মধ্যে যৌগ গঠন হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) গঠিত হয়, যা আমাদের সবার কাছে খাবার লবণ হিসেবে পরিচিত। এবং এই বন্ধনের নাম আয়নিক বন্ধন (Ionic Bond) । আয়নিক বন্ধন ব্যাখ্যা করতে গেলে নিষ্ক্রিয় মৌল বুঝতে পারা জরুরী।

তার আগে নিচের চিত্রটি থেকে আয়নিক বন্ধন সম্পর্কে একটি ধারণা নেওয়া যাক। দেখা যাচ্ছে Na এর প্রথম শক্তিস্তরে দুইটি ইলেক্ট্রন আছে, দ্বিতীয় শক্তিস্তরে আটটি ইলেক্ট্রন ও সর্বশেষ শক্তিস্তরে একটি ইলেক্ট্রন রয়েছে। Cl এর ক্ষেত্রে প্রথম শক্তিস্তরে দুইটি ইলেক্ট্রন আছে, দ্বিতীয় শক্তিস্তরে আটটি ইলেক্ট্রন ও সর্বশেষ শক্তিস্তরে ইলেক্ট্রন রয়েছে মোট সাতটি। বলে রাখা ভাল, মৌলগুলোর নিউক্লিয়াসকে কেন্দ্র করে ইলেক্ট্রনগুলো ঘুরতে থাকে এবং এই ঘোরার পথটি কক্ষপথ বা শক্তিস্তর নামে পরিচিত। বন্ধন গঠনের সময় কেবল সর্বশেষ শক্তিস্তরের মধ্যে ইলেক্ট্রন আদান প্রদান বা দান ও গ্রহণ হয়। আয়নিক বন্ধনের ক্ষেত্রে ইলেকট্রন আদান প্রদান হলেও সমযোজী বা Covalent Bond এর ক্ষেত্রে ইলেকট্রন শেয়ার ঘটে, সেটিও সর্বশেষ শক্তিস্তরেই।

আবার চিত্রটিতে ফিরে আসা যাক। উপরের চিত্রে শুরুতেই দেখা যাচ্ছে, Na তার শেষ শক্তিস্তর থেকে একটি ইলেক্ট্রন ক্লোরিনের শেষ শক্তিস্তরে দিয়ে দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে কেন দিচ্ছে? এবং কেনই বা Cl তার সাতটি ইলেক্ট্রন Na কে না দিয়ে নিজে একটি ইলেক্ট্রন নিচ্ছে?

দেখা যাচ্ছে, Na একটি ইলেকট্রন দিয়ে Na+ এবং Cl সেই একটি ইলেক্ট্রন নিয়ে Cl আয়ন গঠন করেছে। এই দুইটি একক অথচ বিপরীত চার্জের আয়ন পরস্পরকে আকর্ষণ করছে এবং একত্রিত হয়ে সোডিয়াম ক্লোরাইড (NaCl) যৌগ গঠন করছে। এভাবে ইলেকট্রন দান এবং গ্রহণের মাধ্যমে বন্ধন গঠন করার প্রক্রিয়াকে আয়নিক বন্ধন বলে, কেননা এখানে বন্ধন গঠিত হয়েছে দুটি আয়নের মধ্যে এবং তারা আয়ন হয়েছে ইলেক্ট্রন দান এবং গ্রহণ করার
মাধ্যমে।

এখন প্রশ্নে ফিরে আসা যাক। প্রশ্নের উত্তর পেতে নিচের ১ ও ২ মার্ক করা চিত্র দুইটি ভাল করে দেখতে হবে।

চিত্র-১

 

চিত্র-২

প্রথম চিত্রে নিষ্ক্রিয় মৌল বা Inert Gases/ Noble gases এর ইলেক্ট্রন বিন্যাস দেখানো হয়েছে। হিলিয়ামের মাত্র দুইটি ইলেক্ট্রন থাকায় তার শেষ শক্তিস্তরে দুইটি বা একমাত্র শক্তিস্তরে দুইটি ইলেক্ট্রনই রয়েছে এবং সে এভাবে স্থিতিশীল আছে। অর্থাৎ, খুব সহজে সে কোন বিক্রিয়া করবে না। পরের প্রতিটি মৌলের শেষ অরবিটে আটটি করে ইলেকট্রন আছে। এরা সবাই স্থিতিশীল মৌল এবং এভাবে আটটি ইলেকট্রন শেষ অরবিটে রেখে স্থিতিশীল হওয়াকে অষ্টকের নিয়ম বা Octate Rule বলে।
২ নং চিত্রে নিষ্ক্রিয় মৌলগুলোর পর্যায় সারণিতে অবস্থান দেখানো হয়েছে এবং দেখা যাচ্ছে মোট ১৮ টি পিলার সদৃশ গ্রুপের মাঝে সব নোবেল গ্যাস গ্রুপ ১৮ তে অবস্থান করছে।

মজার ব্যাপার হচ্ছে, পর্যায় সারণির সকল মৌল নিজেদের ইলেক্ট্রন দান-গ্রহণ অথবা শেয়ারের মাধ্যমে যে করেই হোক, নোবেল গ্যাসের সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রন বিন্যাসের রূপে যেয়ে স্থিতিশীল হতে চায়। Na+ ও Cl- এর সর্বশেষ শক্তিস্তর s2 P6 আকার ধারণ করেছে যা Na এর ক্ষেত্রে Ne এর মত ও Cl এর জন্য Ar এর মত। এক্ষেত্রে পর্যায় সারণিতে যে মৌলের কাছাকাছি যে নিষ্ক্রিয় মৌল রয়েছে, যৌগ গঠনের সময় সেটি তার মত হতে চায়। আরেকটি ব্যাখ্যা হচ্ছে, কম ইলেকট্রন দান বা গ্রহণ করা সহজ।

আয়নিক বন্ধন নিয়ে ChemicalGOLN এ পরবর্তীতে আরো বিস্তারিত লেখা হবে। সমযোজী বন্ধন নিয়ে ChemicalGOLN এ এর পরবর্তী নিবন্ধটি পড়তে পারেন। আর এই আর্টিকেলের ইলেকট্রন বিন্যাস সম্পর্কিত ব্যাখ্যাগুলোর জন্য ChemistryGOLN.com এর মৌলসমূহের ইলেক্ট্রন বিন্যাস আর্টিকেলটি সহায়ক হবে।

আরও পড়ুন:

কেমিক্যাল কী? কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এর মাঝে পার্থক্য

কেমিক্যাল কী? কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এর মাঝে পার্থক্যঃ কেমিক্যাল বলতে আমরা কী বুঝি? সচরাচর আমরা রাসায়নিক বা কেমিক্যাল শব্দটি শুনে থাকি এবং দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহারও করে থাকি।

কেমিক্যাল বা রাসায়নিক মূলত কেমিস্ট্রি বা রসায়নের একটি বাস্তব ও দৃশ্যমান ফসল (Resultant of Chemistry)। সহজভাবে বললে রাসায়নিক বলতে মূলত যৌগ বুঝায়, তা হতে পারে জৈব যৌগ অথবা অযৌগ যৌগ; যেসকল যৌগ কারখানায় বা গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে এবং যার কোন বিশেষ কাজ বা উদ্দেশ্য আছে।

আবার যদি রাসায়নিক শব্দটি বিশেষ্য (noun) হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বিশেষণ (adjective) হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে কিন্তু আর এমন অর্থ থাকবে না, তখন রসায়নের সাথে সম্পর্কিত যে কোন কিছুকেই রাসায়নিক বুঝাবে, অথবা মৌল বা যৌগগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক বা বিক্রিয়ার ধরণ, ধর্ম সকল কিছুই রাসায়নিক বিষয় বলে অভিহিত হবে ।

পদার্থের ভৌত এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা রসায়নের (কেমিস্ট্রি) কাজ । আর রসায়নের গভীরে প্রবেশ করে আমরা যদি প্রতিটি যৌগ বা মৌলের প্রকৃতি, ধর্ম, পরিবর্তন, বিক্রিয়ার ধর্ম, গঠন, পরিবেশের উপর প্রভাব, মানবজীবনে এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার ইত্যাদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে সেটি হবে রাসায়নিক বিশ্লেষণ।

[ কেমিক্যাল কী? কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এর মাঝে পার্থক্য ]

যারা বিজ্ঞানের ছাত্র বা গবেষক, তারা রাসায়নিক বিশ্লেষণকে কেমিস্ট্রি বা রসায়ন বিষয়টির মাঝে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু, এই অধ্যয়নের ফলাফল প্রকাশিত হয় রাসায়নিক শিল্প কারখানায় প্রয়োজনভেদে রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনের সাফল্যের উপর।
আমরা আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত যত উপাদান আছে, তা নিয়ে যদি ভাবি, দেখা যাবে এর অধিকাংশই রাসায়নিক উপাদান বা রাসায়নিক পণ্য। সকাল বেলা আমরা যে টুথপেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজি, সেটি একটি রাসায়নিক পণ্য এবং শিল্প কারখানায় অনেক রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা প্রক্রিয়া ও বাজারজাত করা হয়। একইভাবে হ্যান্ড ওয়াশ, গোসলের সাবান, চুলের জেল, নাস্তায় খাওয়া জেলি, সস কিংবা ইনসুলিন বা অন্য যে কোন ওষুধ – ইত্যাদি সবই রাসায়নিক পণ্য থেকে তৈরি রাসায়নিক উপাদান।

কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার বা কীটনাশক রাসায়নিক উপাদানের খুব বড় এবং সাফল্যময় উপাদান। কিন্তু অধিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার আবাদি জমির জন্য মোটেও ভাল দিক নয়। এতে মাটির pH ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মাটিতে থাকা নাইট্রোজেন, ফসফরাস ইত্যাদি উপাদানের আনুপাতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। একইসাথে বৃষ্টির পানির সাথে রাসায়নিক সার ধুয়ে পুকুর বা নদীতে মিশে নদীতেও একই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সৃষ্টি হওয়া যে সমস্যাগুলো, এগুলোও কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তনের আলোচিত বিষয়।

পৃথিবীর উপরিভাগের চার ভাগের তিনভাগ উপাদান হলো পানি। পানি একটি রাসায়নিক উপাদান যা হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) নামের দুইটি মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত। মাটিতে নানা প্রকার রাসায়নিক মৌলের মিশ্রণে রাসায়নিক যৌগ গঠিত হয়। রাসায়নিক নিয়ে আলোচনা ও গবেষণার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এসংক্রান্ত অনেক বিষয় ও কোর্স চালু আছে। যেমনঃ

বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণ রসায়ন (Biochemistry), জিও কেমিস্ট্রি (Geochemistry), রাসায়নিক পদার্থবিদ্যা (Chemical physics), রাসায়নিক প্রকৌশল বিদ্যা (Chemical engineering), পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental science), ফরেনসিক (Forensic), গ্রিন কেমিস্ট্রি (Green chemistry), উপাদান বিজ্ঞান বা Material science, ঔষধ বিজ্ঞান বা Pharmacy, ফার্মাকোলজি (Pharmacology), বিষ বিদ্যা বা Toxicology, খাদ্য বিজ্ঞান বা Food technology, রাসায়নিক সমুদ্রবিজ্ঞান (Chemical Oceanography), কৃষি রসায়ন বা Agricultural chemistry ইত্যাদি সবই রাসায়নিক বিশ্লেষনের ক্ষেত্রসমূহের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা রসায়নের বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী বিষয়।

রাসায়নিক পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে গেলে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের প্রয়োজন হতে পারে। আবার প্রাণি বা উদ্ভিদ বিজ্ঞান সংক্রান্ত কোন বিষয় ব্যাখ্যা করতে গেলে বা এদের অভ্যন্তরীণ কোন উপাদানের বর্ণনা দিতে গেলে রসায়ন বা রাসায়নিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোনভাবেই তা সম্ভব না। যেমনঃ যে কোন প্রাণীর বা উদ্ভিদের জেনেটিক বিশ্লেষণ করতে গেলে সেটি হবে প্রকৃতপক্ষে একটি রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং প্রক্রিয়াটিও একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যদিও বা জৈব বিষয় বলে একে জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণ বল হয়।

উপরের চিত্র থেকে DNA বা জীবদেহের বংশগতির ধারক ও বাহক যে আসলে একটি রাসায়নিক গঠনগত ব্যাপার সেটি সহজেই বোঝা যাচ্ছে।

এটি খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, মানবজাতির বা মানব সভ্যতার বিকাশ এবং আধুনিকায়ন রাসায়নিক বা কেমিক্যালের উপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। ঔষধ, খাবার, সুগন্ধি, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি অথবা নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি, সকল কিছুই রাসায়নিক গঠন ও পরিবর্তনের আলোচ্য বিষয়। কেমিক্যাল বা রাসায়নিক নিয়ে আলোচনা আরো গভীর হবে যদি রাসায়নিক মৌলের পর্যায় সারণি বা Periodic Table of the Elements নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়।

পর্যায় সারণির ১১৮ টি মৌল দিয়েই আসলে রসায়ন জগত গঠিত। রাসায়নিক নিয়ে যত আলোচনা সেসবের ক্ষেত্রও এই ম্যান্ডেলিফের আবিষ্কার করা পর্যায় সারণি। পর্যায় সারণি মূলত রাসায়নিক মৌলগুলোকে তাদের সকল ধর্ম অনুযায়ী খুব সুন্দরভাবে ভাগ করে দিয়েছে। পর্যায় সারণি নিয়ে আরো বিস্তৃত বিশ্লেষণ থাকবে ChemicalGOLN এর অন্য কোন আর্টিকেলে।

আরও পড়ুন:

রাসায়নিক পরিবর্তন, রাসায়নিক প্রতীক, রাসায়নিক সমীকরণ, রাসায়নিক পদার্থ, রাসায়নিক বন্ধন, রাসায়নিক প্রকৌশল, রাসায়নিক বিক্রিয়া, রাসায়নিক সূত্র

Exit mobile version