সমযোজী বন্ধন (Covalent bond)

সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) : রাসায়নিক বন্ধন গুলোর মধ্যে সমযোজী বন্ধন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কেননা প্রায় সকল জৈব যোগ বা Organic Compound সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) দ্বারা গঠিত। আমাদের জীবনধারণের অন্যতম প্রধান উপাদান পানি একটি সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত যৌগ। সমযোজী বন্ধন দ্বারা গঠিত যৌগসমূহকে সমযোজী যৌগ বলে। একারণে, পানি একটি সমযোজী যৌগ।

আগের আর্টিকেলে আমরা আয়নিক বন্ধন নিয়ে আলোচনা করেছি। রাসায়নিক বন্ধনের মধ্যে কে বেশি শক্তিশালী? আয়নিক বন্ধন নাকি সমযোজী বন্ধন? অবশ্যই আয়নিক বন্ধন বেশি শক্তিশালী। দুইটি ভিন্নধর্মী চার্জযুক্ত আয়ন পরস্পর আকর্ষণ করে একে অপরের সাথে যুক্ত থাকে বলে এরা অধিক শক্তিশালী হয়। তাহলে সমযোজী বন্ধনে কী ঘটে?

[ সমযোজী বন্ধন (Covalent bond) । রসায়ন গুরুকুল ]

সমযোজী বন্ধনে মৌলগুলো ইলেকট্রন শেয়ার করে, কিন্তু সমযোজী বন্ধনে কীভাবে ইলেকট্রন শেয়ার হয়? একটি মৌল তার সর্বশেষ শক্তিস্তরের একটি অযুগ্ম ইলেকট্রনকে (bond electron) অপর মৌলের সর্বশেষ শক্তিস্তরের অযুগ্ম ইলেকট্রন বা বন্ড ইলেকট্রনের সাথে শেয়ার করে এক জোড়া শেয়ার ইলেকট্রন (Bond pair electron) তৈরি করে। এবং এই শেয়ারকৃত ইলেকট্রন জোড়াকেই বন্ড পেয়ার ইলেকট্রন বলে। একটি বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনে দুইটি ইলেকট্রন থাকে। মজার ব্যাপার হলো, দুইটি ইলেকট্রন দুইটি ভিন্ন মৌল থেকে আসে।

আয়নিক বন্ধন এর আর্টিকেলে অষ্টক এর নিয়ম (Rule of Octate) এবং মৌলগুলোর স্থিতিশীলতা ব্যাখ্যা করা হয়েছে। স্থিতিশীলতার ব্যাপারটি এখানেও সমানভাবে প্রযোজ্য হবে। সর্বশেষ শক্তিস্তরের যে সকল ইলেকট্রন জোড়ায় জোড়ায় অবস্থান করে, কিন্তু বন্ধন গঠনে অংশ নেয় না, তাদের লোন পেয়ার ইলেকট্রন (loan pair electron) বলে। এই লোন পেয়ার ইলেকট্রন এবং বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনের যোগফল আট হয় এবং এভাবে তারা s2p6 বা কাছাকাছি নিষ্ক্রিয় মৌলের (Noble gas) সর্বশেষ শক্তিস্তরের রূপ ধারণ করতে পারে।

উপরের চিত্রটিতে কার্বন (C) ও অক্সিজেন (O) এর সর্বশেষ শক্তিস্তরের ইলেকট্রনগুলোকে দেখানো হয়েছে। C এর ইলেকট্রনকে সবুজ ও O এর ইলেকট্রনগুলোকে লাল দিয়ে বোঝানো হয়েছে। কার্বনের শেষ শক্তিস্তরে দুইজোড়া করে বন্ড ইলেকট্রন দুইপাশে দেখা যাচ্ছে।

CO2 একটি সমযোজী যৌগ। ইলেকট্রন শেয়ারের মাধ্যমে কার্বন ও অক্সিজেন মিলিত হয়ে কার্বন ডাই অক্সাইড গঠন করে এবং অভ্যন্তরীণ মৌলগুলো স্থিতিশীল হয়।

লোন পেয়ার ইলেকট্রনের রিপালশন বন্ড পেয়ার ইলেকট্রনের চেয়ে বেশি হয়। মৌলগুলোর ইলেকট্রন বিন্যাস ChemistryGOLN.com এর “ইলেকট্রন বিন্যাস” আর্টিকেলটিতে বিস্তারিত লিখা হয়েছে। আর রাসায়নিক বন্ধন আর্টিকেলে VSEPR থিওরির কথা কেবল বলা হয়েছিল। পরের আর্টিকেলে বন্ধন কোণ ও সমযোজী যৌগের জ্যামিতিক আকৃতি নিয়ে বিস্তারিত লিখা হবে।

এখন, সমযোজী বন্ধনে ইলেকট্রন শেয়ার নিয়ে আরো গভীরভাবে ভাবলে দেখা যাবে, প্রতিটি মৌল আসলে নিজের ইলেকট্রন বিন্যাস নিয়ে অস্থিতিশীল এবং তারা স্থিতিশীল হতে চায়। তাদের স্থিতিশীল হওয়ার জন্য মডেল মৌল হলো পর্যায় সারণির গ্রুপ 18 এ অবস্থিত নিষ্ক্রিয় মৌলগুলো (Inert Gases)।

সমযোজী যৌগের অনেক ধরণের বন্ধন হয়ে থাকে। যেমন, H-Cl একটি বন্ধন, আবার H-H একটি বন্ধন। প্রতিটি বন্ধনের জন্য বন্ধন শক্তি (Bond Energy) আলাদা হবে।
আবার, সিগমা বন্ধন এবং “পাই” বন্ধন জৈব যৌগের সমযোজী বন্ধনে একটি অতি পরিচিত নাম।

উপরে পাশাপাশি তিনটি ছবিতে সিগমা এবং পাই বন্ধন দেখানো হয়েছে। প্রথম ছবিতে শক্তিস্তরের সংকরায়ন (Hybridization), পরের ছবিতে C-C সিগমা বন্ধন এবং তার পরের ছবিতে C=C ডাবল বন্ডের একটি সিগমা ও একটি “পাই” বন্ধন দেখানো হয়েছে।

জৈব যৌগে একক বন্ধনগুলো সিগমা বন্ধন এবং দ্বি বন্ধন (Double bond) অথবা ত্রি বন্ধনের (Triple bond) ক্ষেত্রে প্রথম বন্ধনটি সিগমা বন্ধন এবং পরের বন্ধনগুলো “পাই” বন্ধন হবে।

 

উপরের চিত্রে দেখা যাচ্ছে একক বন্ধনগুলো সিগমা বন্ধন এবং Propene এর একটি দ্বি বন্ধন (Double bond) রয়েছে, যেখানে একটি সিগমা বন্ধন ও অপরটি “পাই” বন্ধন।

 

সিগমা বন্ধনগুলো পাই বন্ধনের চেয়ে অনেক বেশি শক্তিশালী হয় এবং সিগমা বন্ধনকে সহজে ভেঙ্গে আলাদা করা সম্ভব নয়। এবিষয়ে ChemistryGOLN.com এর “জৈব যৌগ” আর্টিকেলে আমরা বিস্তারিত আলোচনা করব।

অজৈব সমযোজী যৌগের ক্ষেত্রে loan pair এবং bond pair ইলেকট্রন সনাক্ত করা খুব বেশি জরুরী। আমরা একটি চিত্র ও টেবিলের মাধ্যমে এখন সেটি দেখব।

 

 

Ne একটি নিষ্ক্রিয় মৌল, দেখা যাচ্ছে তার কোন বন্ড ইলেকট্রন নাই। তবে মিথেন (CH4 ) গঠনের সময় শেষ শক্তিস্তরের সকল ইলেকট্রন শেয়ারে অংশ নেয় এবং কোন লোন পেয়ার ইলেকট্রন থাকে না। সব ইলেকট্রন এখানে বন্ড পেয়ারে পরিনত হয়েছে। মাঝের চিত্রে দুইটি ফ্লোরিন মিলে F-F বা F2 সমযোজী যৌগ গঠন করেছে।
এখন আমরা পানি (H2O) কীভাবে সমযোজী যৌগ তা ব্যাখ্যা করব।

হাইড্রোজেনের ইলেক্ট্রন বিন্যাসঃ 1H => 1s1

অক্সিজেনের ইলেকট্রন বিন্যাসঃ 😯 => 1s2 2s2 2px2 2py1 2pz1

দেখা যাচ্ছে, H এর একটি মাত্র শক্তিস্তর, যেখানে একটি ইলেকট্রন আছে। এটি Duet Rule মেনে হিলিয়ামের মত হতে চায়। তাই সে তার 1s এ আরো একটি ইলেকট্রনের প্রয়োজন অনুভব করে। অক্সিজেনের 2py ও 2pz এ একটি করে ইলেকট্রন আছে, তাদের Ne এর মত হতে এগুলোতে আরো একটি করে মোট দুইটি ইলেকট্রন লাগবে। তখন দুইটি হাইড্রোজেন একটি অক্সিজেনের সাথে একটি করে ইলেকট্রন শেয়ার করে একটি H2O সমযোজী যৌগ গঠন করে।

পানির অনুর সমযোজী গঠন

চিত্রে একটি পানির অনুর সমযোজী গঠন দেখানো হয়েছে।
একইভাবে CCl4 এর গঠন দেখানো হলো।

 

CCl4 এর গঠন

পৃথিবীতে সমযোজী যৌগের সংখ্যা তুলনামূলভাবে আয়নিক যৌগের থেকে অনেক বেশি।

 

আরও দেখুন:

Leave a Comment