কেমিক্যাল কী? কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এর মাঝে পার্থক্যঃ কেমিক্যাল বলতে আমরা কী বুঝি? সচরাচর আমরা রাসায়নিক বা কেমিক্যাল শব্দটি শুনে থাকি এবং দৈনন্দিন জীবনে আমরা প্রচুর রাসায়নিক ব্যবহারও করে থাকি।
কেমিক্যাল বা রাসায়নিক মূলত কেমিস্ট্রি বা রসায়নের একটি বাস্তব ও দৃশ্যমান ফসল (Resultant of Chemistry)। সহজভাবে বললে রাসায়নিক বলতে মূলত যৌগ বুঝায়, তা হতে পারে জৈব যৌগ অথবা অযৌগ যৌগ; যেসকল যৌগ কারখানায় বা গবেষণাগারে তৈরি করা হয়েছে এবং যার কোন বিশেষ কাজ বা উদ্দেশ্য আছে।
আবার যদি রাসায়নিক শব্দটি বিশেষ্য (noun) হিসেবে ব্যবহৃত না হয়ে বিশেষণ (adjective) হিসেবে ব্যবহৃত হয়, তাহলে কিন্তু আর এমন অর্থ থাকবে না, তখন রসায়নের সাথে সম্পর্কিত যে কোন কিছুকেই রাসায়নিক বুঝাবে, অথবা মৌল বা যৌগগুলোর মধ্যকার সম্পর্ক বা বিক্রিয়ার ধরণ, ধর্ম সকল কিছুই রাসায়নিক বিষয় বলে অভিহিত হবে ।
পদার্থের ভৌত এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ব্যাখ্যা করা রসায়নের (কেমিস্ট্রি) কাজ । আর রসায়নের গভীরে প্রবেশ করে আমরা যদি প্রতিটি যৌগ বা মৌলের প্রকৃতি, ধর্ম, পরিবর্তন, বিক্রিয়ার ধর্ম, গঠন, পরিবেশের উপর প্রভাব, মানবজীবনে এবং শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহার ইত্যাদি বিশ্লেষণ করি, তাহলে সেটি হবে রাসায়নিক বিশ্লেষণ।
[ কেমিক্যাল কী? কেমিস্ট্রি বা রসায়ন ও কেমিক্যাল বা রাসায়নিক এর মাঝে পার্থক্য ]
যারা বিজ্ঞানের ছাত্র বা গবেষক, তারা রাসায়নিক বিশ্লেষণকে কেমিস্ট্রি বা রসায়ন বিষয়টির মাঝে অধ্যয়ন করেন। কিন্তু, এই অধ্যয়নের ফলাফল প্রকাশিত হয় রাসায়নিক শিল্প কারখানায় প্রয়োজনভেদে রাসায়নিক পণ্য উৎপাদনের সাফল্যের উপর।
আমরা আমাদের প্রতিদিনের ব্যবহৃত যত উপাদান আছে, তা নিয়ে যদি ভাবি, দেখা যাবে এর অধিকাংশই রাসায়নিক উপাদান বা রাসায়নিক পণ্য। সকাল বেলা আমরা যে টুথপেস্ট ব্যবহার করে দাঁত মাজি, সেটি একটি রাসায়নিক পণ্য এবং শিল্প কারখানায় অনেক রাসায়নিক উপাদানের মিশ্রণ ঘটিয়ে বিভিন্ন মান নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে তা প্রক্রিয়া ও বাজারজাত করা হয়। একইভাবে হ্যান্ড ওয়াশ, গোসলের সাবান, চুলের জেল, নাস্তায় খাওয়া জেলি, সস কিংবা ইনসুলিন বা অন্য যে কোন ওষুধ – ইত্যাদি সবই রাসায়নিক পণ্য থেকে তৈরি রাসায়নিক উপাদান।
কৃষিক্ষেত্রে ব্যবহৃত সার বা কীটনাশক রাসায়নিক উপাদানের খুব বড় এবং সাফল্যময় উপাদান। কিন্তু অধিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার আবাদি জমির জন্য মোটেও ভাল দিক নয়। এতে মাটির pH ভারসাম্য নষ্ট হয় এবং মাটিতে থাকা নাইট্রোজেন, ফসফরাস ইত্যাদি উপাদানের আনুপাতিক ভারসাম্য বিনষ্ট হয়। একইসাথে বৃষ্টির পানির সাথে রাসায়নিক সার ধুয়ে পুকুর বা নদীতে মিশে নদীতেও একই সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এই সৃষ্টি হওয়া যে সমস্যাগুলো, এগুলোও কিন্তু রাসায়নিক পরিবর্তনের আলোচিত বিষয়।
পৃথিবীর উপরিভাগের চার ভাগের তিনভাগ উপাদান হলো পানি। পানি একটি রাসায়নিক উপাদান যা হাইড্রোজেন (H) ও অক্সিজেন (O) নামের দুইটি মৌলিক উপাদান দিয়ে গঠিত। মাটিতে নানা প্রকার রাসায়নিক মৌলের মিশ্রণে রাসায়নিক যৌগ গঠিত হয়। রাসায়নিক নিয়ে আলোচনা ও গবেষণার জন্য বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজে এসংক্রান্ত অনেক বিষয় ও কোর্স চালু আছে। যেমনঃ
বায়োকেমিস্ট্রি বা প্রাণ রসায়ন (Biochemistry), জিও কেমিস্ট্রি (Geochemistry), রাসায়নিক পদার্থবিদ্যা (Chemical physics), রাসায়নিক প্রকৌশল বিদ্যা (Chemical engineering), পরিবেশ বিজ্ঞান (Environmental science), ফরেনসিক (Forensic), গ্রিন কেমিস্ট্রি (Green chemistry), উপাদান বিজ্ঞান বা Material science, ঔষধ বিজ্ঞান বা Pharmacy, ফার্মাকোলজি (Pharmacology), বিষ বিদ্যা বা Toxicology, খাদ্য বিজ্ঞান বা Food technology, রাসায়নিক সমুদ্রবিজ্ঞান (Chemical Oceanography), কৃষি রসায়ন বা Agricultural chemistry ইত্যাদি সবই রাসায়নিক বিশ্লেষনের ক্ষেত্রসমূহের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা রসায়নের বিভিন্ন বিশ্লেষণধর্মী বিষয়।
রাসায়নিক পরিবর্তনকে ব্যাখ্যা করতে গেলে পদার্থবিজ্ঞান ও গণিতের প্রয়োজন হতে পারে। আবার প্রাণি বা উদ্ভিদ বিজ্ঞান সংক্রান্ত কোন বিষয় ব্যাখ্যা করতে গেলে বা এদের অভ্যন্তরীণ কোন উপাদানের বর্ণনা দিতে গেলে রসায়ন বা রাসায়নিক বিশ্লেষণ ছাড়া কোনভাবেই তা সম্ভব না। যেমনঃ যে কোন প্রাণীর বা উদ্ভিদের জেনেটিক বিশ্লেষণ করতে গেলে সেটি হবে প্রকৃতপক্ষে একটি রাসায়নিক বিশ্লেষণ এবং প্রক্রিয়াটিও একটি রাসায়নিক প্রক্রিয়া, যদিও বা জৈব বিষয় বলে একে জৈব রাসায়নিক বিশ্লেষণ বল হয়।
উপরের চিত্র থেকে DNA বা জীবদেহের বংশগতির ধারক ও বাহক যে আসলে একটি রাসায়নিক গঠনগত ব্যাপার সেটি সহজেই বোঝা যাচ্ছে।
এটি খুব সহজেই অনুমান করা যাচ্ছে যে, মানবজাতির বা মানব সভ্যতার বিকাশ এবং আধুনিকায়ন রাসায়নিক বা কেমিক্যালের উপর খুব বেশি মাত্রায় নির্ভরশীল। ঔষধ, খাবার, সুগন্ধি, সার, কীটনাশক থেকে শুরু করে কোয়ান্টাম কেমিস্ট্রি অথবা নিউক্লিয়ার কেমিস্ট্রি, সকল কিছুই রাসায়নিক গঠন ও পরিবর্তনের আলোচ্য বিষয়। কেমিক্যাল বা রাসায়নিক নিয়ে আলোচনা আরো গভীর হবে যদি রাসায়নিক মৌলের পর্যায় সারণি বা Periodic Table of the Elements নিয়ে বিস্তর আলোচনা করা হয়।
পর্যায় সারণির ১১৮ টি মৌল দিয়েই আসলে রসায়ন জগত গঠিত। রাসায়নিক নিয়ে যত আলোচনা সেসবের ক্ষেত্রও এই ম্যান্ডেলিফের আবিষ্কার করা পর্যায় সারণি। পর্যায় সারণি মূলত রাসায়নিক মৌলগুলোকে তাদের সকল ধর্ম অনুযায়ী খুব সুন্দরভাবে ভাগ করে দিয়েছে। পর্যায় সারণি নিয়ে আরো বিস্তৃত বিশ্লেষণ থাকবে ChemicalGOLN এর অন্য কোন আর্টিকেলে।
আরও পড়ুন: